"সৌন্দর্য উপভোগের জন্যও মূল্য দিতে হয়- সেটা হচ্ছে তোমার মনোযোগ।"
বৈশাখী প্রিয় কবিতা উৎসব – ইয়াসির আরাফাতের সাথে

কবিতা প্রেমের রাজধানী। এই প্রেম শুধুমাত্র কপোত-কপোতীর প্রেম না। কবিতা সবার আগে মানুষকে নিজের প্রেমে মজতে শেখায়। কবিতা অসময়ে ছায়া দেয়, সুসময়ে ছায়া দিতে শেখায়। কবিতা মানুষের বুকের ভেতরের কথা বলে।
পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ উপলক্ষে আমরা জানতে চেয়েছিলাম আপনাদের প্রিয় কবিতাগুলো। মাত্র একদিনের নোটিশে এই আয়োজন আমরা করতে চেয়েছিলাম। ভয়, শঙ্কা দুটোই ছিলো। কিন্তু আপনাদের উৎফুল্ল অংশগ্রহণ আমাদের শুধু সাহস যোগায়নি, দিয়েছে অনুপ্রেরণাও। আপনাদের প্রিয় কবিতাগুলো নিয়ে আমাদের এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে।
আজকে থাকছে ইয়াসির আরাফাত-এর প্রিয় কবিতাগুলো নিয়ে আয়োজন। আশা করি তার প্রিয় কবিতাগুলো আপনাদেরও ছুঁয়ে যাবে।
শাহ্ মখদুম – সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ
রাত : সমনামবুলিস্ট ট্রেনটা ছুটে যায়, সুনসান
শূন্যমার্গে; যেন মর্গের দেরাজে-দেরাজে লাশ
বার্থে-বার্থে হিমায়িত ঘুম-গুমসুম ইনসান;
রাতকানা এক টিকেট-চেকার করে খানাতল্লাশ।
উৎকণ্ঠার ন্যায় নিঃসীম পদ্মার বিস্ফার,
শাহ্ মখদুম দুম দুম হয় হার্ডিঞ্জ্ ব্রিজ পার।
রাত : ছাইচাপা আপার-বার্থে ধূমপিণ্ডের মতো
গুলে-যাওয়া কোনো প্রত্যঙ্গের করি অনুসন্ধান,
চোখ-কান-হাত-চুল-নখ-দাঁত ছড়ায়ে ইতস্ততঃ
ঢুঁড়ি লাপাত্তা আত্মা আমার— হৈহৈ হয়রান।
উৎকণ্ঠার ন্যায় নিঃসীম পদ্মার বিস্ফার,
শাহ্ মখদুম দুম দুম হয় হার্ডিঞ্জ্ ব্রিজ পার।
তিরিশ পাখির মতো উড্ডীন এক-ট্রেন খণ্ডতা,
মহান্ সেমুর্গ্ আর কত দূর? পোড়াদহ জংশন
আর কত পথ? শত-শত প্রাণ শুষে নিয়ে, অন্ধটা
কই আমাদের নঞ্ হ’য়ে, হায়, ব’য়ে যায় শন্ শন্?
উৎকণ্ঠার ন্যায় নিঃসীম পদ্মার বিস্ফার,
শাহ্ মখদুম দুম দুম হয় হার্ডিঞ্জ্ ব্রিজ পার।
রাত : তকরার— একবার যদি পড়শি আমায় ছুঁতো!
গলন্ত-লোহা-বহা যমুনায় খেয়া দেয় নিশি-কানু;
শরীর পালায় শরীরীকে ফেলে; সময়ের চেয়ে দ্রুত,
একটা মানুষ হবে ব’লে, ছোটে এক-ট্রেন শুক্রাণু!
উৎকণ্ঠার ন্যায় নিঃসীম পদ্মার বিস্ফার,
শাহ্ মখদুম দুম দুম হয় হার্ডিঞ্জ্ ব্রিজ পার।

কুড়িগ্রাম – মাসুদ খান
কোনোদিন আমি যাইনি কুড়িগ্রাম।
রাত গভীর হলে আমাদের এই প্রচলিত ভূপৃষ্ঠ থেকে
ঘুমন্ত কুড়িগ্রাম ধীরে ধীরে আলগা হয়ে যায়।
অগ্রাহ্য করে সকল মাধ্যকর্ষণ।
তারপর তার ছোট রাজ্যপাট নিয়ে উড়ে উড়ে
চলে যায় দূর শূন্যলোকে।
আমরা তখন দেখি বসে বসে আকাশ কত-না নীল
ছোট গ্রাম আরো ছোট হয়ে যায় আকাশের মুখে তিল।
অনেকক্ষণ একা-একা ভাসে নিখিল নভোভারতের রাজ্যে রাজ্যে।
দক্ষিণ আকাশে ওই যে একনিষ্ঠ তারাটি,
একসময় কুড়িগ্রাম তার পাশে গিয়ে চিহ্নিত করে তার অবস্থান।
তখন নতুন এই জ্যোতিষ্কের দেহ থেকে মৃদু-মৃদু লালবাষ্প-ঘ্রাণ ভেসে আসে।
সেই দেশে, কুড়িগ্রামে, ওরা মাছরাঙা আর পানকৌড়ি দুই বৈমাত্রেয় ভাই
কুড়িগ্রামের সব নদী শান্ত হয়ে এলে
দুই ভাই নদীবুকে বাসা বাঁধে
স্ত্রীপুত্রকন্যাসহ তারা কলহ করে।
নদী শান্ত হয়ে এলে
শাস্ত্রবাক্যে বাঁধা যত গৃহনারী
প্রাচীর ডিঙিয়ে এসে নদীকূলে করে ভিড়
প্রকাণ্ড স্ফটিকের মতো তারা সপ্রতিভ হয়।
হঠাৎ বয়নসূত্র ভুলে যাওয়া এক নিঃসঙ্গ বাবুই
ঝড়াহত এক প্রাচীন মাস্তুলে ব’সে
দুলতে দুলতে আসে ওই স্বচ্ছ ইস্পাত-পাতের নদীজলে।
কুড়িগ্রাম, আহা কুড়িগ্রাম!
পৃথিবীর যে জায়গাটিতে কুড়িগ্রাম থাকে
এখন সেখানে নিঃস্ব কালো গহ্বর।
কোনোদিন আমি যাইনি কুড়িগ্রাম।
আহা, এ-মরজীবন!
কোনোদিন যাওয়া হবে কি কুড়িগ্রাম?

মাতৃভূমি – কামরুজ্জামান কামু
কে তুমি নিশুতি বাংলাদেশের পাখির সুরে গো ডাকো
চিঁ-আও! চিঁ-আও! ধ্বনির আবেগে রাত জেগে বসে থাকো
না না পাখি নয় তারা নয় সে তো দুর্বিনীত নিগার
আমার হাড্ডি খুলে বাঁকা করে গড়ে সে নিজের হাড়
আমার শিশুরা দোলে তার কোলে যেন প্রকৃতির বুকে
বাদুড়-ছানারা ঝুলে আছে কালো মাই চুষবার সুখে
যেন বকসারি আকাশের গায়ে রেখা টেনে চলে যায়
পূর্ণিমারাতে সে যেন আমার মায়ের মাদুলি চায়
আমি খরগোশ কালো দাঁড়কাক সবুজ পাখির ডানা
ঝাপটাই যেন আকাশের মত নীলরঙ শামিয়ানা
ফুলে উঠে ফের খুলে পড়ে যায় চৌচির বৈশাখে
আমি শুয়ে আছি কান খাড়া করে ঠান্ডা মাটির ডাকে
শুয়ে আছি ওগো পুকুরপাড়ের গাবের গাছের তলে
ধানের ক্ষেতের পুবালি বাতাসে মহামিলনের ছলে
আমাদের দেহে পরাগের মত লুটোপুটি খায় হেসে
তুমি গো আমারে জন্ম দিয়েছো তোমার বাংলাদেশে
তোমার বিলের বুকের শাপলা ফোটার বর্ষাকালে
দল হয়ে আমি দু’পায়ে জড়াই বামনডাঙার খালে
গলগল করে বয়ে চলে যাই চিতল-চিত্তসম
বুকে চেপে ধ’রে দেখো তো জীবন কাঁপে কেন প্রিয়তম!
মুখে চেপে ধ’রে রাখো তো আমারে মুখ চেপে ধ’রে রাখো
পলে ও বিপলে আতায় কাঁঠালে ঘনীভূত হয়ে থাকো
দেখো আমবনে বটনির্জনে নিখিলনদীর কূলে
কামু ফিরে যায় ভ্রুণ হয়ে তার মায়ের নাভির ফুলে

লীলাচূর্ণ – মজনু শাহ
বিজেত্রীর ঘরে আমি যাই নি সেদিন, লোকে তবু
আমাকেই বেরুতে দেখেছে। ভ্রষ্ট সেই সন্ধেবেলা
গোলাপ ও আফিমের প্রজ্ঞাময় সংলাপের দিকে
হেঁটে গেছি এক স্বপ্নরিক্ত নটরাজনের মতো।
সেই হাড়-কঙ্কনের পথে, প্রভু, ভেবেছি বিস্ময়ে:
রঘু ডাকাতের মতো হয়ে যাই কেন যে আমরা
ওষ্ঠ চুম্বনের লগ্নে! মাটিতে অর্ধেক ডুবে থাকা
রথের চাকার গোঁয়ার্তুমি কীভাবে শরীরে জাগে!
নায়িকা-চূর্ণের রাতে, মৃত বেলফুলের ভিতর
তার গাঢ় কেশগন্ধ আমি পাই। বিজেত্রী বলেছে:
কাছে না এসেও এইভাবে নিকটে থাকার পথ
উন্মুক্ত রয়েছে, এইভাবে, বাক-বিভূতির দেশে
পৌঁছে গিয়ে দেখা যায় ঘুম-হারা কত মীনশব্দ,
কার স্পর্শ লেগে ওঠে ধীরে শিখীবর্ণ যবনিকা…

বাবা – মাসুদার রহমান
জঙ্গলের পাশে বাড়ি। বাবা হারিয়ে গেছেন
জঙ্গলে
ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে মায়ের মুখভারি সংসার
স্কুল পড়ুয়া ছেলেটি
ড্রয়িং খাতায় পেন্সিলে ছবি আঁকে জঙ্গলের
এখনও স্কুলে না যাওয়া মেয়েটি
ইরেজার ঘষে ঘষে জঙ্গল ফিকে করে—
দেখে, সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছেন বাবা

এই দেশে বৃষ্টি হয় – ব্রাত্য রাইসু
কহে ব্রাত্য শুনো শুনো—যত আছ অভাজন
কূটকাব্যে আনন্দ বিস্তর
আজি দিন ভ্রমাগত—চতুষ্পার্শে নাশগীত
জাগিছেন প্রকৃতি আহলাদে
১.
এই দেশে বৃষ্টি হয়, এসব বৃষ্টির
কার্য ও কারণ নেই; আমরা অক্লান্ত জনগণ
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই বৃষ্টি দেখি, যারপরনাই
কৌতূহলহীনভরে
আমাদের নাগরিক রুচির দরজায়
বৃষ্টির পানির কোনো আবেদন, ইসথেটিক্স নেই
ব্যক্তিগতভাবে আমরা বর্ষার বিরুদ্ধে
বৃষ্টির আহলাদে মন নাচে না ময়ূর আমাদের
আমাদের অন্তর্গত ব্যুৎপত্তির কল্যাণে
উপলব্ধি করি আমরা
ওভাবে বলবার কোনো কিছু নেই:
‘অন্ধকার মধ্যদিনে বৃষ্টি ঝরে মনের মাটিতে’…
যদি বৃষ্টি ঝ’রে থাকে,
যদি সেই মৃত্তিকার দশা হয় কর্দমে পিচ্ছিল
সে-সব বলবার কোনো কথা নয়, এখনও অনেক
অনেক সমস্যা আছে, যার
সমাধান তো বহু বহু দূরের ঘটনা, নেহায়েৎ সমস্যা বলেই
প্রতিভাত হয় নি এখনও। তাই,
দরজা বন্ধ করে দিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে
শুনি বর্ষার ক্রন্দন
শুনি, কারা যেন গেয়ে যাচ্ছে আষাঢ়শ্রাবণ
আর এইসব বৃষ্টির পতনে
আমাদের নৃত্যকলা শিল্পগীত সাহিত্যদর্শন
যে যার নিজের ইচ্ছা বাপের ইচ্ছায়
বিকশিত হতে থাকে; বিকাশের নিয়ম রয়েছে—
তাই, বিকশিত হই আমরা নিয়মিতভাবে।
আমাদের নিয়ামক পছন্দ রয়েছে
বাবু রবীন্দ্রনাথের হীন বর্ষাপ্রীতি আমরা কখনও
পছন্দ করি নি, আমরা
নির্ভেজাল শুষকো থাক্তে চাই।
আমরা বুঝতেই পারি না, কী ভেবে যে রবীন্দ্রনাথ
গুণকীর্তন করতেন বর্ষার!
এখানে বৃষ্টির অন্ধকারে
সহসা সন্ত্রস্ত হয় আমাদের সাবকনশাস্!
পুরাকাল থেকে তেরছা ক্রুদ্ধ বজ্রপাত
হয় বলে মনে হয়, আমরা বিনীত জনগণ
নিমীলিত নেত্রে দেখি ভাবের জগতে
সদা বৃষ্টিপতনের
কী এক মহড়া চলছে! রুইকাতলারাঘববোয়াল
সব ভেসে উঠছে চারিধারে, বারিধারা ভেসে যাচ্ছে
মুহুর্মুহু পয়সার ঠেলায়…
২.
কোথা থেকে আসে এই নোংরা জল, পলিব্যাগ
গভীর জলের মাছ, জন্মনিরোধক? (আরো যা যা আসে আর কি)
রাশি রাশি নথিপত্র, নূহের জাহাজ
ভরা সাহায্যবহর
আসে সউদি শেখ তেলের ড্রাম বাজাতে বাজাতে
আসে বর্জ্যের কাফেলা, সব
গিলে নেন মাতা ঔদরিক।
আর বৃষ্টি হলে আমাদের ভালোই লাগে না
আর বৃষ্টি হলে ভিজে যাই আমরা সকলে
আর ভিজতে ভিজতে আমরা ক্রমশ
প্রকাশিত হতে থাকি
আমাদের মধ্যে কোনো আড়াল থাকে না, হায়
আড়ালবিহীন হয়ে কিভাবে বাঁচবো আমরা
আমাদের ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে
ব্যক্তিগত দেহ আছে, প্রাতঃকৃত্য আছে
ব্যক্তিগত ব্যাপারে আমরা কথা বলতে একদম
পছন্দ করি না
আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার সহজ নয়, সরলতা নয়
আমাদের ব্যক্তিগত প্রত্যেক বিষয়ে
খুব মেরুদণ্ড আছে, কোনো বৃষ্টির সংশ্রব নেই
প্রকাশনা নেই
তবু কেন বৃষ্টি হয়? তবু,
এই তবু জীবনানন্দের তবু নয়;
এই তবু আমাদের উষ্মার প্রকাশ
এই তবুকে ইগনোর করে বৃষ্টি দীর্ঘ মহাকালব্যাপী
এই দেশে মহাকাল অত দীর্ঘ নয়
আমাদের মহাকাল—ব্যক্তিগত, নিজের ব্যাপার।
তাতে সময়চেতনা, কোনো ইতিহাস
অধ্যাপনা নেই, তাতে অর্থনীতির ছাত্রী বসে আছে
এ কা কি নী
জীবনের অর্থ খুঁজিতেছে
তাকে অর্থ দাও, কীর্তি দাও, সচ্ছলতা দাও
তাকে বিপন্ন বিস্ময় দাও, একদিন জোর করে
বৃষ্টিতে ভেজাও। বলো,
মহাকালে এইরূপ বৃষ্টি হয়ে থাকে।
৩.
তোমার অলক্ষ্যে যাহা বারিপাত, পতনঘটনা
তাহা নিজে নিজে বৃষ্টিপাত, নিজের রটনা
তাহা নিজের ইচ্ছায়
ইচ্ছারূপ প্রকাশিত বিশুদ্ধ অস্তিত্ব, তাহা বিশুদ্ধ ঘটনা
তাহা না-যদি ঘটিছে তবে সকলই স্থবির, সব চিরবর্তমান।
তাহা ঘটছেন বলেই, আমরা বিগতকাল আমরা গোধূলি
আমরা সদা যা চাহিছে মন অতীত অতীত
আর অতীত অতীত নহে যথাযোগ্য, যদি তাহে
না ঘটে ঘটনা, যদি নাহি বৃষ্টি নাহি গান
দিন গেল…দিন তবে যায় কি কখনও? দিন—
বসে থাকে কর্ম নেই, কোনোরূপ অপরাহ্ণ নেই;
শুধু রাত্রি শত রাত্রি আমাদেরে আচ্ছাদন ক’রে
আমরা রাত্রিতে আশ্রয় আমরা
শ্রাবণে উদ্ধার, আমরা একদিন দুইদিন যদি বৃষ্টি হলো
আমাদের দিন গেল বৃষ্টি দেখে দেখে…
আর লক্ষ্য করো মন তুমি অতীত বিষয়ে
কথা বলো, কেমন যে ভালো লাগে উতল হাওয়ার
আন্দোলন টের পাওয়া যায় যেন বৃষ্টি হচ্ছে
অন্ধকারে, ভ্রাম্যমাণ নদীর কিনারে।
৪.
আজি দিন বড়ো বৃষ্টি নাই, আজি দিন
শ্রাবণ কোথায়? কোথায় মেঘের পরে মেঘ
জমেছে, মেঘের নাহি শেষ?
শ্রবণে না পশে রিমঝিম
শ্রবণে ঘটিছে নীরবতা; হেরো মন
বিজুরিবিদ্যুৎ
ঝলকিছে আঁখির তারায়
আজি আঁখির তারায় রামধনু
আজি ঝরে পড়ো ওগো মেঘ,
বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ো দেবতা আমার
তুমি জলীয় দেবতা, তুমি বাষ্প মাত্র, তুমি মেঘ
উঁচুতে উঁচুতে
বাস করো, ভেসে যাও, ভাসার ব্যাপারে
নিতান্ত অভিজ্ঞ তুমি, আমরা গরিষ্ঠ জনগণ
অনাহারে অর্ধাহারে ভেসে যেতে চাই মেঘ
তোমার মতন; তবু
ভাসার ব্যাপারে হায়, আমাদের কিছুমাত্র
নিয়ন্ত্রণ নেই
তাই
আমাদের দিনগুলি বৃথা যায় বহিয়া পবনে…

সন্ধ্যাতারাগাছ – নৈরিৎ ইমু
সন্ধ্যাতারাগাছ তুমি, তোমার তলায় গিয়ে শুই
অন্ধ আমি, চোখে দেখি নারে— চিন্ময় আলোর রেখা
পাতারে ছুঁইছে পাতা, শব্দ তার কী যে ঘোরলাগা
শুয়ে শুয়ে তোমার তলায় আমি আধভাঙা মনে
উপরে হয়ত নীলে ভাসতেছে আকাশ সুমনা
সন্ধ্যাতারাগাছ তুমি, তোমার শরীরে রাখি হাত
হাওয়ায় চূর্ণ করি নিজের শীতল মুখচ্ছবি
চোখ নাই তবু শুনি, পাখিদের ভাষা মানুষেরা
শিখতে পারলো কই! গাছ হই, সন্ধ্যাতারাগাছ
তোমার তলায় গিয়ে শুই, সবুজের ঘ্রাণ নিয়ে
প্রকৃত মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে যাবো তারার ঝিলিক
যেতে চাই বহুদূর জলের উপর রাখা সাঁকো
পার হয়ে— তারাগাছ, প্রোথিত শেকড় খুলে নিয়ে
তোমার সাথেই আমি পার হবো পৃথিবীর পথ ….

কৌম মধুকর – নির্ঝর নৈঃশব্দ্য
নদী একা ফিরবে না পাহাড়ে। নদী একা রূপ বদলে ফেলেছে। নদী একা পুড়ে গেছে স্রোতে।
এমনই চিরদিন রক্তলগ্ন ভোর। ক্লান্ত চোখ ঘুমাতে পারে না। ক্লান্ত চোখ অনেক গোপন ধরে অস্থির। ক্লান্ত চোখ আর কাঁদতে পারে না। ক্লান্ত চোখ বুজে আসে বুজে আসে। নিজেকে ডাকো ভোরের প্রান্তে। নিজেকে ভাবো আলোহীন জোনাক। তুমি একদিন ধীরে পুড়েছিলে। তুমি একদিন আলো করেছিলে।
কোথাও যেতে পারি না আর। শীতের আঁচে শীত পুড়ে যায় আবার। এখানে কেবল শিশির নামাই। এখানে জমে শুধু শিশিরের ছাই। প্রতিদিন কেটে চলে শুষ্ক খেচর। প্রতিরাতে হাত বাঁধে কৌম মধুকর।

ব্রেন ড্রেন – সমুদ্র সন্তান
ঘোড়ার গায়ে এত তীব্র গন্ধ, তবু বঙ্গবাজার পার হতেই মহিনের ঘোড়াগুলো চোখে পড়ে, আহা জীবনানন্দ তুমি এই গা রি রি দুর্গন্ধের ভেতর থেকেও কাগজী লেবুর ঘ্রাণ তুলে নিতে পারো। তারপর ফিস্টুলা পুনর্বাসন কেন্দ্র পার হতে হয়, বালতির জল টানা শেষ হলে, কলকাতা ছেড়ে একবার দেখে যেও ঢাকায়, সেফটিট্যাংক ভেঙে আমাদের বিপ্লবী গু মুতগুলো কিভাবে লাফিয়ে পড়ছে উচ্চবিত্ত নালায়।

প্রিয় কবিতার এই পাঠককে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাথে এত দারুণ সব কবিতা শেয়ার করার জন্য। আশা করি তার পাঠক জীবনে তিনি আরো দারুণ সব কবিতা পড়ার সৌভাগ্য পাবেন। তার জন্য শুভকামনা।
আপনিও যদি নিজের প্রিয় কবিতাটি আমাদের সাথে ভাগ করে নিতে চান, পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে। আমরা সেটা ভাগ করে নেব আরো অসংখ্য পাঠকের সাথে।
আমাদের অন্যান্য আয়োজনের সঙ্গী হতে চোখ রাখুন আমাদের ফেসবুক পেইজে, নিয়মিত ভিজিট করুন লণ্ঠনে। যোগ দিন শিল্পের এক নতুন উৎসবে।