"সৌন্দর্য উপভোগের জন্যও মূল্য দিতে হয়- সেটা হচ্ছে তোমার মনোযোগ।"
বৈশাখী প্রিয় কবিতা উৎসব – প্যারিস তালুকদারের সাথে

কবিতা প্রেমের রাজধানী। এই প্রেম শুধুমাত্র কপোত-কপোতীর প্রেম না। কবিতা সবার আগে মানুষকে নিজের প্রেমে মজতে শেখায়। কবিতা অসময়ে ছায়া দেয়, সুসময়ে ছায়া দিতে শেখায়। কবিতা মানুষের বুকের ভেতরের কথা বলে।
পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ উপলক্ষে আমরা জানতে চেয়েছিলাম আপনাদের প্রিয় কবিতাগুলো। মাত্র একদিনের নোটিশে এই আয়োজন আমরা করতে চেয়েছিলাম। ভয়, শঙ্কা দুটোই ছিলো। কিন্তু আপনাদের উৎফুল্ল অংশগ্রহণ আমাদের শুধু সাহস যোগায়নি, দিয়েছে অনুপ্রেরণাও। আপনাদের প্রিয় কবিতাগুলো নিয়ে আমাদের এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে।
আজকে থাকছে প্যারিস তালুকদার-এর প্রিয় কবিতাগুলো নিয়ে আয়োজন। আশা করি তার প্রিয় কবিতাগুলো আপনাদেরও ছুঁয়ে যাবে।
মাতাল হও – শার্ল বোদলেয়ার
অনুবাদ: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সব সময় তোমাকে অবশ্যই মাতাল হতে হবে।
সবকিছুই তো রয়েছে, : এটাই একমাত্র প্রশ্ন।
সময়ের বীভৎস বোঝা যাতে অনুভব করতে না হয়,
যা তোমার কাঁধ গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, নুইয়ে দিচ্ছে মাটির দিকে,
তোমাকে মাতাল হতেই হবে, একটুও থামালে চলবে না।
কীসে মাতাল হবে, সুরা কবিতা অথবা উৎকর্ষ,
যেটা তোমার পছন্দ। কিন্তু মাতাল হও।
এবং যদি কোনও সময়ে, কোনও প্রাসাদের সিঁড়িতে,
কোনও খানা-খন্দের সবুজ ঘাসের মধ্যে,
অথবা তোমার নিজেরই ঘরের নিরানন্দ নির্জতায় তুমি জেগে ওঠো,
তোমার নেশা যখন কমতে শুরু করেছে অথবা কেটেই গেছে,
জিগ্যেস করো বাতাসকে, ঢেউ, নক্ষত্র, পাখি, ঘড়ি
এমন সব কিছুকে, যারা ওড়ে, গুঞ্জন করে, গড়ায়, গান গায়, কথা বলে,
তাদের জিগ্যেস করো, এখন কীসের সময়,
তখন সেই বাতাস, ঢেউ, নক্ষত্র, পাখি, ঘড়ি তোমাকে উত্তর দেবে:
এখন মাতাল হওয়ার সময়।
সময়ের নিপীড়িত ক্রীতদাস হওয়ার বদলে মাতাল হও,
একটুও না থেমে! সুরা, কবিতা অথবা উৎকর্ষ, যেটা তোমার পছন্দ।

লেক – আলফস দ্য লামারতিন
অনুবাদ: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
এসো তবে আমরা ভালোবাসি, এসো ভালোবাসি
ধাবমান প্রহরকে উপভোগ করি দ্রুত
মানুষের কোনও বন্দর নেই
সময়ের কোনও তটরেখা নেই
শুধু বয়ে চলে, আমরাও পার হয়ে যাই।

ভবিষ্যদ্বাণী – জুল সুপরডই
অনুবাদ: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
একদিন এই পৃথিবী আর কিছুই থাকবে না
শুধু এক অন্ধ অবস্থান, যেখানে শুধু বিভ্রান্ত দিন আর রাত্রি ঘোরে
বিশাল আকাশের নীচে যেখানে ছিল আন্দিজ পর্বতমালা
সেখানে একটি পাহাড়ও নেই, এমনকি একটা গিরিখাতও না
পৃথিবীর সমস্ত প্রাসাদ ও বাড়িগুলির মধ্যে
শুধু টিকে থাকবে একটি মাত্র বারান্দা
এবং সেই বিশ্বের মানবজাতির মানচিত্রে শুধু একটি বিষাদ, যার মাথায় আচ্ছাদন নেই।
ভূতপূর্ব আটলান্টিক মহাসাগরের চিহ্ন থাকবে
বাতাসের সামান্য লবণাক্ত স্বাদে
একটা মায়াময় উড়ন্ত মাছ জানবে না
সমুদ্র কেমন দেখতে ছিল।
১৯০৫ সালের এক কুপে’তে বসে
(চারটে চাকা আছে, কিন্তু রাস্তা নেই)
অতীত কালের তিনটি যুবতী কন্যা,
তখনও রয়ে গেছে, কিন্তু শরীর নেই, শুধু বাষ্প,
জানলা দিয়ে তাকিয়ে থাকবে বাইরে আর ভাববে,
প্যারিস বেশি দূর নয়
তারা প্রশ্বাসে নেবে বাতাসের দুর্গন্ধ
যাতে গলা বন্ধ হয়ে আসে।
একদা যেখানে অরণ্য ছিল, সেখানে ভেসে উঠবে
একটা পাখির গান, কেউ তাকে
দেখতে পাবে না, বুঝতে পারবে না, শুনতেও পাবে না
শুধু ঈশ্বর শুনবেন মন দিয়ে, এবং বলবেন:
আরে, এ যে একটা বউ কথা কও।

প্রিয় কবিতার এই পাঠককে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাথে এত দারুণ সব কবিতা শেয়ার করার জন্য। আশা করি তার পাঠক জীবনে তিনি আরো দারুণ সব কবিতা পড়ার সৌভাগ্য পাবেন। তার জন্য শুভকামনা।
আপনিও যদি নিজের প্রিয় কবিতাটি আমাদের সাথে ভাগ করে নিতে চান, পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে। আমরা সেটা ভাগ করে নেব আরো অসংখ্য পাঠকের সাথে।
আমাদের অন্যান্য আয়োজনের সঙ্গী হতে চোখ রাখুন আমাদের ফেসবুক পেইজে, নিয়মিত ভিজিট করুন লণ্ঠনে। যোগ দিন শিল্পের এক নতুন উৎসবে।