"সৌন্দর্য উপভোগের জন্যও মূল্য দিতে হয়- সেটা হচ্ছে তোমার মনোযোগ।"
বৈশাখী প্রিয় কবিতা উৎসব – তানিম মিনহাজের সাথে

কবিতা প্রেমের রাজধানী। এই প্রেম শুধুমাত্র কপোত-কপোতীর প্রেম না। কবিতা সবার আগে মানুষকে নিজের প্রেমে মজতে শেখায়। কবিতা অসময়ে ছায়া দেয়, সুসময়ে ছায়া দিতে শেখায়। কবিতা মানুষের বুকের ভেতরের কথা বলে।
পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ উপলক্ষে আমরা জানতে চেয়েছিলাম আপনাদের প্রিয় কবিতাগুলো। মাত্র একদিনের নোটিশে এই আয়োজন আমরা করতে চেয়েছিলাম। ভয়, শঙ্কা দুটোই ছিলো। কিন্তু আপনাদের উৎফুল্ল অংশগ্রহণ আমাদের শুধু সাহস যোগায়নি, দিয়েছে অনুপ্রেরণাও। আপনাদের প্রিয় কবিতাগুলো নিয়ে আমাদের এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে।
আজকে থাকছে তানিম মিনহাজ-এর প্রিয় কবিতাগুলো নিয়ে আয়োজন। আশা করি তার প্রিয় কবিতাগুলো আপনাদেরও ছুঁয়ে যাবে।
আসো, ২০১৭ – ইমরুল হাসান
এমনভাবে আসো, যেন বাতাস, দেখি-ই নাই…
যেমন রোদ নিইভা যায়
বয়স বাড়তে থাকে দুনিয়ার;
সোশ্যাল মিনিংয়ের ভিতর যেইভাবে শব্দগুলি হারায়া যায়…
ছিলো, কিন্তু এখন কনটেক্সট ছাড়া আর কিছুই নাই
অথচ আসে শে
হাঁটতে হাঁটতে
ভাঙ্গা শরীর, ক্লান্ত মন
আসতে চায় নাই…
কথাগুলি না বললেও হইতো, বলে এমনভাবে
যেন পাতাগুলি গাছের, কাঁপতে পারতেছে না বাতাসে…
আসার পরে চলে যাবা তুমি
আর আমি ভাববো,
এমনভাবে আসো, যেন ছিলা-ই তুমি, যেন যাবা না কোথাও
মুহূর্তের দুনিয়ার এই বিভ্রম ছাইড়া যাবে না
আমারে
কোনদিন আর…

উলালে – রাবিয়া সাহিন ফুল্লরা
কী সুন্দর হাসি হাসি মুখ করে কথা বলতেছি
আহারে! আহারে!
যেন মাত্রই বিষ্টি হইলো
আর মাত্রই রইদে চকচকা উঠানে ঝাড়ু দিতে আসলাম।
কাঠবাদামের ফুল রেণু রেণু
পড়ে আছে কাঁচা আম আর
কচি পাতার দল এখানে ওখানে।
একপাশে শুকনা পাতা মেলে দিয়ে
ঝকঝকা উঠানে
এখন লাল লাল মরিচ শুকাইতে দিবো রে!
মুগ আর খেসারীও দিবো কিছু
আর কিছু খাইশ্যা
আলাদা আলাদা বিছানে।
বিষ্টিতে ওদানো কাপড়ও
মেলতে হবে দড়িতে।
ওরে, অনেক রইদ রে আজকে উঠানে!
উলালে আমি ভুলেই গেছি কী ছিল যে মনে…

আম্মার হাঁসগুলা – জহির হাসান
দাদাই আমার এই বোনটার নাম রাখছিল
আত্মা। আম্মা ডাকত রুহু।
আত্মাই আম্মার হাঁসগুলিরে চিলের ছোঁ,
শেয়ালের হাত থাকি বাঁচাইত।
আত্মাকে আমরা
ভাবতাম তার শরীর আছে।
সে আমাদের বোন।
আম্মাদের হাঁসগুলা
কিছুদিন দেখেশুনে রাখে।
আমি তাকে একদিন ছুঁই
দেখছিলাম।
কইছিলাম, তুই তো
আমারই বোন।

যেইখানে নিয়া যায় আমার মুখুস্ত সমাজ – ইব্রাকার ঝিল্লী
.
সকালবেলা শার্ট পেন্ট ও জুতা
পরতে পরতে এবং
ঘর হইতে বের হতে হতে এবং
গাড়িতে উঠতে উঠতে ও
নামতে নামতে,
নামতে উঠতে, উঠতে নামতে
হাটতে হাটতে দেখি এক সময়
পৌছায় গেছি যেইখানে আমার পৌছানোর কথা;
অন্য কোথাও নয়। ভুলেও
আমি পৌছাইতে পারি ঠিক জায়গায়
সঠিক পোশাক পরে; এইরকম
হয়ে গেছি যদিও,
আগে থেকেই এমন হওয়ার জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি।
যেন ভাত খাইতে খাইতে টিভি দেখতে দেখতে
দেখতে থাকার মতন সক্রিয়তায়
বিলুপ্ত হয়ে গেছি গভীর জীবন যাপনে।
নিদ্রায় জাগায় হাটায় বসায়
লেপ্টায়ে গেছি এবং
এমন সম্যক মেডিটেশনেই আমি পৌছাইতে পারতেছি
আমার গোছানো থাকায়, না থাকায়-
যেইখানে নিয়া যায় আমার মুখুস্ত সমাজ।

তুমরার কান্দনের ভিতরে – আবু তাহের তারেক
তুমরার কান্দনের ভিতরে
সারা রাইত আমরা আছিলাম
আমরার নিদ্রায়
কেউ আইসা চিক্কুর পাড়তেছিল
তার জানটুকু হাতের
মুঠায় লইয়া
কারো কারো মুখে রক্তজবা
ফুল ফুটছিল
তুমরা যখন রাজপথ দাপাও
মিছিলে স্লোগান দেও
মনে রাইখ
আমরাও আছিলাম

না-ভালো লাগার গান – ব্রাত্য রাইসু
না-ভালো লাগার গান যদি গাই…
না-যদি তোমার কথা তোমাকে শোনাই…
না-ধরো স্মরণ করলাম তোমারে সহস্র যুগ…
তারো পরে কিছু প্রেম অবশিষ্ট থাকে নাকি,
প্রিয়তমে?
যদি থাকে-সেই থাকা/থাকাগুলি দিয়া
কাগজের নৌকা বানাইয়া
আসল নাওয়ের পাশে যদি আমরা সন্দেহজনক
ঘুরাঘুরি করি… কিংবা ধরো ঘুরাঘুরি না কইরা…
ধরো নৌকা না বানাইয়া যদি নৌকার ছাদের উপ্রে
বসলাম আম্রা দুই জনাতে
তুমি বললা, ‘এই নৌকা কাগজে বানাইন্না,
আমি এই নাও লইতাম না, আমারে আসল নাও দেও।’
আমি বললাম, ‘আসল গাঙের দেখা যদি পাই, মহাত্মন, তবে নাও
আসলেই দেই।’
তখনও যে প্রেম হচ্ছে আমাদের
সেই কথা
যুগ যুগ ধরে
ভেসে রইবে বইয়ের পাতায়, তাই
একই নৌকা একই নদী এক যুগ একই স্রোত
এক কল্প, এক ভাষা, এক হাসা-
হাসি সহ ভাসিতেছি
জনে জনে
মুখে গাইছি ভালো না-বাসার গান
ভালোবাসতে বাসতে।

এমন মেঘলা দিনে – ব্রাত্য রাইসু
এমন বৃষ্টিঝরা অন্ধকার
এমন মেঘলা দিনে
তুমি কোথায় যাও
তুমি এমন বৃষ্টি বৃষ্টি দিনে
কোথায় কোথায় মেঘের খোঁজে
উধাও হয়ে যাও?
তুমি জানলা নাকি ছাদের থেকেই যাত্রারম্ভ করো?
তখন বন্ধ থাকে তোমার দুটি চোখ?
যখন মেঘের মেঘের ওপার থেকে আসতে থাকে অনেক মেঘের দল
যখন রাতের সঙ্গে দিনের সঙ্গে রাতের রদবদল
ঘটছে এবং বন্ধ হচ্ছে তোমার মাত্র
দুইটি মাত্র চোখ
ওরা বন্ধ থাকে কখন তুমি সকল অন্ধকার
ধারণ করে নিজের থেকে উধাও হও গো মেঘ!
তুমি দিনের মধ্যে রাত্রি চলছে মেঘের ফাঁকে বৃষ্টি পড়ার ঝাকে
যেন একটি বোয়িং হারিয়ে গেল
বজ্রপাতের বাঁকে!

প্রিয় কবিতার এই পাঠককে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাথে এত দারুণ সব কবিতা শেয়ার করার জন্য। আশা করি তার পাঠক জীবনে তিনি আরো দারুণ সব কবিতা পড়ার সৌভাগ্য পাবেন। তার জন্য শুভকামনা।
আপনিও যদি নিজের প্রিয় কবিতাটি আমাদের সাথে ভাগ করে নিতে চান, পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে। আমরা সেটা ভাগ করে নেব আরো অসংখ্য পাঠকের সাথে।
আমাদের অন্যান্য আয়োজনের সঙ্গী হতে চোখ রাখুন আমাদের ফেসবুক পেইজে, নিয়মিত ভিজিট করুন লণ্ঠনে। যোগ দিন শিল্পের এক নতুন উৎসবে।